সৃষ্টির শুরুতে তাদের রাজত্ব ছিল যা তারা বংশ পরম্পরায় জেনে এসেছে। কিন্তু মানবজাতি গত হাজার,লক্ষ, কোটি বছর ধরে তাদের দাসত্ব বানায়ে রাখছে। সময় আবার এসেছে অন্য প্রাণীকুলের মানুষের বিরুদ্ধে এক হবার তাদের সেই হারানো মুক্ত জীবন যাত্রা পুনুরুদ্ধার করার। শহুরে ফাঁকা রাস্তার বিভিন্ন অলি গলির মোড়গুলিতে কুকুররা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায় মূলত তারাই প্রথম আবিস্কার
করে কোন এক অজানা কারনে মানুষ আজ গৃহবন্দি।
এভাবে বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর তারা নিজেদের প্রজাতির বাইরে অন্য সব শহুরে জিব-জন্তুদের একত্রিত করে দল ভারি করতে থাকে। তারা প্রথমেই বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা ও শহরের গুরুত্তপূর্ণ জায়গা ও প্রবেশ্মুখগুলো নিজেদের দখলে নিতে থাকে। এক জীব থেকে অন্য জীবে দ্রুতই মুখে মুখে ছড়ায়ে পরে মানুষ আজ গৃহবন্দি। আর তাই এই সুজোগ কাজে লাগাতে বনের সকল হিংস্র জন্তু জানোয়ার ও পশুপাখি সব এক হয়ে দাড়ায় মানব সমাজকে রুখে দিতে।
“ফিরিয়ে দাও অরণ্য” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুনিয়ার তাবত প্রানিকুল আজ এক কাতারে সামিল হয় তাদের একটাই লক্ষ এ যাত্রায় মানুষকে রুখে দিতে পারলে আবার এই পৃথিবী হবে তাদের। সকল জীব আবার বনে বাদাড়ে অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারবে মনের আনন্দে শিকার করতে পারবে এ যেন এক মহা আনন্দ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পৃথিবীতে তাদের পুরোনো আধিপত্য ফিরিয়ে আনার।
আর তাই দলবদ্ধ জীব জন্তু শহরের বুকে অবস্থিত চিরিয়াখানাগুলোয় প্রথম আক্রমণ করে বন্দি সমস্ত জন্তু জানোয়ারকে মুক্ত করে নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করে ও মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে। সমস্ত জন্তু জানোয়ার শহরের আনাচে কানাচে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রন নিতে থাকে মানুষ যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে। শহুরে জন্তু জানোয়ারদের সহযোগিতা করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গহীন বন জঙ্গল থেকে আরও হিংস্র টাইপের জন্তু জানোয়ার দল বেধে আসতে থাকে তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হয়ে যায়।
পুরো শহরময় হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের দখলে এসে যায় অবস্থা বেগতিক দেখে মানব সমাজের পরিবেশবাদীরা তাদের সাথে কথা বার্তা চালাতে থাকে সমঝোতা করার জন্য। মানব সমাজ থেকে তাদের কাছে মানব ও অন্য প্রাণীকুলের সহাবস্থানের প্রস্তাব দেয় ও একজন প্রতিনিধিও ঠিক করা হয় যার নাম মানিতা। মানিতা অন্যান্য জীবের কাছে একটি প্রস্তাবনা দেয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে মানুষ ও অন্য সমস্ত প্রাণীকুলের একই সাথে সম সহাবস্থানের। কিন্তু অন্য সমস্ত প্রাণীকুলের নেতা জায়ান্টাগ তা নাকচ করে দিয়ে বলে “নো মোর ডিসকাশন” কারন সে জানে মানুষ এক ধূর্ত প্রানী। জায়ান্টাগ উল্টো হুংকার দিয়ে উঠে অচিরেই যেন বিভিন্ন বাসা বাড়িতে খাচায় বন্দি পোশ্য প্রানিদের ছেড়ে দেয়া হয় নয়ত তারা প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করে সগোত্রিয়দের উদ্ধার করে আনবে। এতে মানিতা আরও বিচলিত হয়ে পরে সে সংবাদ সম্মেলন করে মানুষ সমাজকে নির্দেশ দেয় সমস্ত পোশ্য প্রানিদের দ্রুত ছেড়ে দিতে। মানিতার কথামত মানুষজন দ্রুত তাদের পোশ্য প্রানিদের মুক্ত করে দিতে থাকে এমন কি পশু পাখি নিয়ে যারা হাটে বাজারে বেচা কেনা করত তারাও হামলা হওয়ার আশঙ্কায় খাঁচায় আটকে রাখা সমস্ত বন্য পশু পাখিকে মুক্ত করে দিতে থাকে। বন জঙ্গলের প্রাণী, শহুরে প্রানী ও পোশ্য প্রানী সকল প্রাণীকুল একাকার হয়ে মিলন মেলায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পরে। এই পৃথিবীর নির্মল আলো বাতাস গায়ে লাগায়ে তা উপভোগ করতে থাকে দল বেঁধে গল্প গুজব নাচ গান করতে থাকে মনের আনন্দে সারা শহরময় ঘুরে বেড়াতে থাকে। আর মানুষ আজ করোনা নামক এক ভয়ংকর অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে তাদের দীর্ঘদিনের জীবন যাত্রার অভ্যাস পরিত্যাগ করে যে যার ঘরে বন্দি তার উপর তাদের ঘিরে ধরে আরও এক নতুন আতঙ্ক অন্য প্রানিকুলের পৃথিবী দখলের চেষ্টা।
এই পৃথিবীটা যে মানুষের একার না আজ তা মানবজাতি উপলব্দি করতে পারছে এই পৃথিবীটা ছিল সমস্ত প্রানি জগতের এক সাথে বসবাসের। মানুষ তার খোদা প্রদত্ত জ্ঞ্যান গরিমা দিয়ে পৃথিবীকে অনেক উন্নত করেছে সত্য কিন্তু পৃথিবীটাকে তারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে অন্য প্রানিদেরকে তুচ্ছু তাচ্ছিল্য করে খাঁচায় বন্দি অথবা তাদের জীবন যাত্রাকে একটি গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে।
কিন্তু পাশাপাশি তো এটাও সত্য প্রথমযুগে মানুষকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দিনের পর দিন বন জঙ্গলের জন্তু জানোয়ারের সাথে যুদ্ধ করে আসতে হয়েছে। আজ মানবজাতি পৃথিবীর বুকে শ্রেস্ট এক জাতি হিসেবে নিজেকে দাবি করে আসছে কারন তারা উচু বিল্ডিং, ইমারত কল কারখানা, রাস্তা ঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তৈরি করে পৃথিবীকে একটি বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয় মানুষ আরও উন্নত আবাস গড়তে পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহ
আবিস্কারেও ব্যস্ত, বিজ্ঞানের বিভিন্ন কলা কৌশল নিয়ে নিত্য নতুন উদ্ভাবনে ব্যস্ত । এসব সব কিছুই সত্য তবে মানুষ সভ্য হবার পর থেকে সব কিছুই করেছে শুধু নিজেদের জন্যই আর এই কারনে মানব ব্যাতিত অন্যান্য প্রানিকুলের অস্তিত্তও প্রায় বিলিন হবার পথে।
এক সময় করোনা নামক ভাইরাসের প্রভাব কিছুটা কমতে থাকে মানুষ আবার তার দৈননিন্দ কাজে ফিরতে থাকে। কিন্তু ততোদিনে মানুষ বুঝে গেছে এই পৃথিবীটা এখন আর আগের মত নেই এই পৃথিবী এখন আর তাদের একার না মানবজাতি বাদেও এই পৃথিবীর অংশীদার এখন অন্য সব প্রানিকুলও। পৃথিবীর বুকে বিচরন করা নিয়ে এখন পথে ঘাটে রাস্তায় প্রায়শই অন্য প্রাণীকুলের সাথে মানুষের সংঘর্ষ বাধে প্রান হানাহানি ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এতকাল পরেও এই সভ্য যুগে এসেও মানুষ ও অন্য প্রানিকুলের অবস্থান আবারও এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাড়ায় যা প্রথম যুগে ছিল একে অন্যকে মেরে টিকে থাকার লড়াই। এই মানব ও অন্য সমস্ত প্রানিকুলের টিকে থাকার অস্তিত্তের লড়াইয়ে মানব তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্র শস্ত্র ও কুট কৌশলের কাছে অন্য সব প্রানিকুল আবারও পরাজিত হতে থাকে। কিন্তু জায়ান্টাগ পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার এই অস্তিত্তের লড়াইয়ে শেষ রক্ত পর্যন্ত লড়তে থাকে তার দলবল নিয়ে। জায়ান্টাগ ও তার দলবলের একটাই স্বপ্ন তাদের পরবর্তী প্রজন্মদের জন্য একটি সুন্দর অরন্য বা আবাস নিশ্চিত করে যাওয়া।
চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ হয় মানুষ না হয় কোন হিংস্র জন্তু জানোয়ারের এ রকম পরিস্থিতিতে একটি সমাধানে আসতে মানিতা আবারও তার চেস্টা অব্যাহত রাখে এবং এবার সে সফল হয়। মানিতা অন্য প্রাণীকুলের নেতা জায়ান্টাগ ও তার দল বলের কিছু শর্ত মেনে নিয়ে তাদের সাথে মানব সমাজের একটি টেবিল বৈঠকের ব্যবস্থা করে। চারিদিকে ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ এ রকম এক উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ কয়েক দিন ও রাত লাগাতার আলোচনা চলতে থাকে। আলোচনায় দুপক্ষ থেকেই কিছু জিনিস পরিস্কার করা হয় একই পৃথিবীর বুকে সম সহবস্থান করতে গেলে দু পক্ষকেই কিছু ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করে তা মেনে চলতে হবে। প্রাথমিকভাবে দু পক্ষ থেকেই
কিছু খসড়া নিয়মনীতি অনুমোদন করা হয় যেমন – মানুষ বিনা কারনে শহরে বসবাস করা পশু পাখিকে মারতে বা হত্যা করতে পারবেনা, তাদেরকে শহরে অবাধে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা দিতে হবে, বিনোদনের জন্য দুনিয়ার বুকে চিরিয়াখানা বলে কিছু থাকবেনা তা চিরতরে বন্ধ করে দিতে
হবে, বনের পশু পাখিকে শখের বশে খাচায় আটকে রাখা যাবেনা, বন উজাড় করে কোন ভাবেই পশু পাখির আবাস নস্ট করা যাবেনা। প্রতিটি মনুস্য বসবাস যোগ্য এলাকায় গাছ গাছালি ও অরন্য ঘেরা জায়গা কাটা যাবেনা সেখানে যেন শহুরে পশু পাখি ও জীব জন্তু অবাধে চলাফেরা করতে পারে সেগুলি নিশ্চিত করতে হবে। মানব সমাজের পক্ষ থেকে মানিতাও এক গাদা প্রস্তাবনা তুলে ধরে যাতে করে মানবজাতির প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় অন্য সব প্রানিকুল হুমকি হয়ে না দাড়ায় জায়ান্টাগও মানিতার সকল প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষণ করে এবং তা অন্য প্রানিকুলও মেনে নেয়। এক সময় অদৃশ্য করোনার কাল মেঘ পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে সরে যায় । করোনা উত্তর জিবনে শুরু হয় এক নতুন পথ চলার যে পথ চলায় খোদা প্রদত্ত মানুষ ও অন্যান্য জীব খোদার এই দুনিয়ায় একে অপরের কোন রকম ক্ষতি সাধন না করেই এক সাথে সম সহাবস্থান করতে থাকে।