-
Posted by
Hasina Akhtar Nigar March 7, 2019 -
Filed in
Society
-
##women day
-
1,756 views
বেগুনী নারী দিবস ও নারী মনের বিষন্ন কিছু কথন
হাসিনা আকতার নিগার
লেখক - কলামিস্ট
৮ মার্চ নারীদের দিন। নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নারীরা সাজবে বেগুনী রংয়ের সাজে। নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতি বছর এক দিনের জন্য কর্পোরেট জগতের অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের এ দিনটাতে নারী কর্মীদের হাতে তুলে দেয় অফিসের সকল কার্য পরিচালনার দায়িত্ব । কাবিক্য ভাবে বলা যায়,' ৮ মার্চ নারী রাজ্যে প্রজার বসবাস।'
নারীর অধিকার আদায়ের এ দিনটিকে মনে রেখে কিছু বিষয়ে বিষন্নতায় ছেয়ে আছে মন। এর নেপথ্যের কারণ হলো একটি ঘটনা। এক নারী একজন অসাধু ব্যক্তির অন্যায়মূলক কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেয়।আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। অন্যায়কারী ব্যক্তিটি সে নারীকে পরাস্ত করার জন্য সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কি নারীর কর্মজীবন নিয়ে অহেতুক বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অবস্থা দেখে মনে হয় নারীটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মহা অন্যায় করে ফেলেছে। হয়তো বা এর জন্য নারীটিকে আরও অনেক যন্ত্রনা সইতে হবে। তার জীবন ও বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু নারী ব্যক্তি চরিত্রতে আঘাত করা অতি সস্তা কাজ এ সমাজে। আর যদি হয় কর্মজীবী তাহলে তো কথাই নেই।
নারী দিবসকে সামনে রেখে তাই মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যি কি নারীদের এ সমাজে প্রাপ্য সম্মানটুকু মিলেছে এখন পর্যন্ত। বরং পুরুষের সাথে সমতালে কাজ করতে গিয়ে নারীকে প্রতিনিয়তই লড়াই করতে হয়ে ঘরে বাইরে। ব্যক্তি জীবনে কর্মজীবি প্রায় প্রতিটি নারীর রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা নানাভাবে । অন্যদিকে নারী যখন সামাজিক, রাজনৈতিক বা আইনগত বিষয়ে প্রতিবাদী হয় তখন তাকে শুনতে হয় নানা ধরনের অশ্রাব্য কথা। আর 'নারীবাদী ' শব্দটি এখন অনেকটাই গালির পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
নারীর কাজ হলো কেবল ঘর সামলানো- এমন ভাবনার দিন এখন আর নেই। দশভুজা নারী ঘরে বাইরে নিজেকে আলোকিত করছে তার মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে। তবু নারী যখন কু - কথা কিংবা কু - আচরনের স্বীকার হয়, তখন মনে হয় এ সমাজ কবে নারীকে মানুষ হিসাবে চিন্তা করবে? লিংগ দিয়ে বিচার করে নারীকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা কি চলবে নিরন্তন?
সমাজে অন্যায় বা অপকর্মের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে মনে হয় শুধু পুরুষের। এমন মানসিকতার ব্যক্তিরা একজন প্রতিবাদী নারীকে হেয় করতে এক বিন্দু পিছ'পা হয় না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে নারীর পরিবারের বাইরে আর কিছু করার নেই। তার বর্হির জগতের বিষয়ে চিন্তা করার কোন অধিকার বা দায়িত্ব নেই। তাই একটি দিবস দিয়ে নারীকে সম্মান, শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে অনেক বেশি দরকার তাকে প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ হিসাবে সম্মান দেয়া।
বিশ্বের সকল আন্দোলন সংগ্রামে পুরুষের সাথে নারীর অবস্থান যেমন অস্বীকার করা যায় না। তেমন নারীকে অবলা বলে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখার মানসিকতা সমাজে আজো আছে। এ মানসিকতার ব্যক্তিদের কাছে নারীর বলিষ্ঠ কন্ঠে দৃঢ় অবস্থান আধুনিকতার অভিশাপ সম।
এমন অবস্থানে এগিয়ে চলা নারীদের জন্য লড়াইয়ের পথটা দীর্ঘ। মনের কোনে আঁধার নেমে এলে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। তা না হলে চলার পথে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বেগুনী আর সাদা রংয়ের মমার্থ ম্লান হয়ে যাবে। অর্থহীন হয়ে পড়বে ১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দের সেই নারী শ্রমিকদের আন্দোলন। যা দিয়ে সূচনা হয় নারী দিবস উদযাপনের ইতিহাস।
নারীকে ভুলে গেলে চলবে না বেগুনী আর সাদা রং ভেনাসের। যা নারীর ও প্রতীক। আর বেগুনী এখন নারীবাদীদের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে গেছে। যার অনুপ্রেরণা অলিস ওয়াকারের 'দ্যা পারপাল ' বইটি। ধারণা করা হয় এ বইয়ের নারী অধিকারের বক্তব্য থেকেই নারী আন্দোলনের সাথে জুড়ে গেছে পারপাল বা বেগুনী রং টি। বেগুনী সুবিচার ও মর্যাদার ইংগিত বহন করে। যা দৃঢ়ভাবে নারীর সমতায়নের সাথে সম্পৃক্ত।
সুতরাং কন্যা জায়া জননী রূপে নারীর অবয়বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আর নয়। বরং মানুষ হিসাব নিজের সম্মানকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সকল ক্ষেত্রে । এর জন্য আঘাত এলে তার প্রতিবাদ করে সমাজে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিতে হবে নিজের অধিকার ও কর্তব্য বোধ থেকে।
Comments