-
Posted by
Hasina Akhtar Nigar February 12, 2019 -
Filed in
Society
-
#women life
-
1,788 views
নারীর ঠিকানা বদলে যায় কেবল
- হাসিনা আকতার নিগার
একজন নারী - কন্যা জায়া জননী রূপে সকলের কাছে পরিচিত, যেমন করে একজন পুরুষ – পুত্র স্বামী বাবা রূপে প্রকাশিত । কিন্তু তফাতটা শুরু হয় জন্ম লগ্ন থেকেই। ছেলে ছোট বেলা থেকেই জানতে পারে কিংবা তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয় সে হলো বংশ পরম্পরায় আগামী দিনে বাড়ির মূল মালিক । তার স্থায়ী ঠিকানা বা নিজের বাড়ি । আর মেয়েটি জানতে পারে তার বাবার ঘর হলো অস্থায়ী নিবাস । এটা তার আপন ঠিকানা নয় । যখন বিয়ে হয়ে নিজের সংসার হবে তখণ সেটাই হবে তার আপন ঠিকানা।
কিন্তু ঘূর্নায়মান জীবনের পথে একজন নারী কি কখনো বলতে পারে তার ঠিকানা কোনটি? যদিও নারী এগিয়ে যাচ্ছে সমাজের নানা ক্ষেত্রে , তবু এ প্রশ্ন কালে কালে এক অবস্থানে রয়ে গেল তাদের জীবনে। যতভাবেই নারী শিক্ষা কর্মে সফল হোক না কেন সব কিছু ছাপিয়ে যেন তার একটা পরিচয় হয় মুখ্য। আর তা হলো বিয়ের আগে বাবা বাড়ি, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি , বৃদ্ধা হলে সন্তানের বাড়ি। নিজের কোন ঠিকানা নেই।
এ যে কেবল ঘরনী নারী জীবনের গল্প তা নয়। সকল নারীর জীবনে তার ঠিকানা সংকট রয়ে যায় আমৃত্যু পর্যন্ত। সংসার করতে গিয়ে বৈরী বাতাসে যদি কোন নারীর জীবনে নেমে আসে একাকীত্ব তবে তার পথ চলা হয়ে উঠে আরো বন্ধুর। লোক সমাজ, কাজের ক্ষেত্র সহ সবখানে এক ধরনের কটাক্ষ বা তার প্রতি করুনার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে প্রতিনিয়ত । স্বামীর সংসার ঠাঁই হয়নি বলে বাবার ঘরে ফিরে গেলে হয়ে যায় কদিনের মেহমান অথবা বাবা –মা না থাকলে ভাইয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়া। নিজের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পরিবারে তার অবস্থানটা থাকে কোন ঠাসা।কারন সবাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এ বাড়ী তার আপন ঠিকানা নয়। আবার সমাজের নিয়ম অনুশাসনের কারনে নিজের মত করে কোন নিবাস খুজেঁ নিতে গেলে পড়তে হয় আরো বিড়ম্বনাতে । মনে হয় একা থাকাটাই বড় অপরাধ।
এমন একাকী মানুষ গুলো যখণ জীবনের সাথে লড়াই করে সন্তানদের বড় করে যখন জীবনের শেষ প্রান্তে দাড়াঁয়, তখন সন্তানের সংসারের তার ঠাঁই হলেও সবার জন্য তা সুখকর নয়। সন্তানের আপন জগতে কখনও কখনও সে হয়ে যায় বোঝা । প্রতিনিয়ত সন্তান বা তাদের স্ত্রীদের কাছে থেকে শুনতে হয় একটি কথা –‘আমাদের সাথে মা থাকেন।’ মা যেন সংসারে এর পরজীবী মানুষ। ছেলের সংসারের আরেক নারী পুত্র বধূটি ভুলে যায় সে নিজেও একজন নারী। শ্বাশুড়ির অনেক কষ্টের ফসল তার প্রতিষ্ঠিত স্বামী। কিংবা একটি বারের জন্য মনে করে না , আজ যে শ্বাশুড়িকে তার সংসারে বাড়তি লোক মনে করছে এমন জীবন তারও হতে পারে।
এমন জীবনের টানা পোড়নে নারী কোনদিন খুজেঁ পায় না তার আপন ঠিকানাটি। কেননা তার নিজের মত করে বাঁচার অধিকারটাই কেড়ে নিয়েছে মানুষ পৃথিবীর বুকে আসার সাথে সাথেই। তাই সকল দায় দায়িত্ব মিটিয়ে যখণ নারী নিজের ভাবনাতে নিজেকে খুজেঁ তখন দেখে চারদিক একবারে শূন্য । চিঠির খামে কিংবা দাপ্তরিক কাগজে যে ঠিকানা লিখে তা কোনদিনই তার আপন ঠিকানা নয়। জীবনের পালাবদলে বদলে যায় সকল ঠিকানা। যদিও এ নারী সংসারকে সাজিয়ে তুলে তার আপন শ্রমে আপন গুনে ।অথচ সে সংসার হয় না তার কোনদিনই আপন ঠিকানা। বাবার ঘর , স্বামীর সংসার , সন্তানের সংসার - এই তিন ঠিকানাতে কন্যা জায়া জননী রূপে নারী আসলেই এক ঠিকানাবিহীন মানুষ হিসাবে রয়ে যায় আজীবন।
Comments