-
Posted by
Hasina Akhtar Nigar March 18, 2019 -
Filed in
Society
-
## জংগীবাদের কোন ধর্ম নাই
-
1,968 views
কোন ধর্মই হত্যা জংগীবাদ সর্মথন করে না
হাসিনা আকতার নিগার
বিশ্বের কোন ধর্ম কখনো সহিংসতার পক্ষে না বরং তা মানবতাবোধ, শান্তি এবং মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার পক্ষে। ধর্ম কখনো হত্যা-সন্ত্রাসকে সমর্থন দেয় না। বরং প্রতিটি ধর্মেরই মূল উদ্দেশ্য হল সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং ধর্মের প্রকৃত অনুসারীদের নিয়ে বিশ্বব্যাপি শন্তির জন্য কাজ করে যাওয়া।
তবে ধর্মের দোহাই দিয়ে শান্তি স্থাপনের নাম মৌলবাদী বেশ কিছু সংগঠন বিশ্বব্যাপি সৃষ্টি করে চলেছে অশান্তি-অরাজকতা-সন্ত্রাস। ধর্মকে হাতিয়ার করে বিশ্বব্যাপি তারা চালিয়ে যাচ্ছে হত্যা সহ নানা ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
বিশেষত বর্তমানে জংগীবাদের কারনে ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আর মুসলমানরা আখ্যায়িত হচ্ছে সন্ত্রাসী হিসেবে। অথচ ইতিহাস বলে প্রথম ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে ১০৯৫ সালে। যা জেরুজালেম এবং কন্সটান্টিনোপলের অধিকার নেয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে করেছিল। এবং এর সমাপ্তি ঘটেছিল ১২৭২ সালে ৯ম ধর্মযুদ্ধ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে।
যদিও দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে ইসলামিক দেশগুলোতে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ বিশাল আকার ধারণ করেছে। অনেক মুসলমান একে ধর্মীয় কাজ ভেবে এতে অংশ নেয় এবং ভাবে যে এর জন্য তারা পুরষ্কৃত হবে। কিন্তু এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। একই ভাবে মুসলমানদের এ জংগীবাদের প্রতিশোধ নিতে অন্য ধর্মের অনুসারীরা একই পথে হাঁটছে। যা নজীর সাম্প্রতিক সময়ের নিউজিল্যান্ডের ঘটনা। একটা ভ্রান্ত ধারণার মধ্য দিয়ে বিপন্ন হচ্ছে বিশ্ব। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্মে এ ধরনের মানব হত্যার কোনো স্থান নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে জংগীরা এ সব হত্যাকে জিহাদ বলে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু এখানেও ধর্মের অপব্যাখ্যা করা হয়। মূলত ইসলাম শুরুর প্রাক্কলে যেসব জাতি এবংসাম্রাজ্যের লোকেরা প্রকৃতপক্ষেই অসহায় এবং নির্যাতিত ছিল তারা ইসলামের পতাকাতলে সামিল হয়েছিল। যখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সাহাবিরা মিশর, পারস্য এবং রোম আক্রমণ করেছিল তখন সেখানকার সাধারণ মানুষ তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টাই করেনি। বরং তারা ইসলামকে এমনভাবে গ্রহণ করেছিল যে, যেন এর মধ্য দিয়ে শত শত বছরের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছিল তারা। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণে যুদ্ধ বা জিহাদ হতে পারে তা ছিল তাদের ধারণাতীত। একইভাবে স্পেনের মানুষও তাদের অত্যাচারী রাজাদের হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য ইসলামের সাহায্য চায়। এটাই ইসলামি জিহাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
এই জিহাদের নিয়মকানুনের দিকে একটু নজর দিলেই সচেতন মানুষদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, ইসলাম হলো সত্যের ধর্ম। যুদ্ধকালে অসৎ শক্তি যদি পিছিয়ে যায় তাহলে তাদের অংগচ্ছেদ করা, নির্যাতন করা অথবা জবাই করা ইসলামে নিষিদ্ধ। তারা যতটাই অসৎ হোক না কেন। চুক্তি ভঙ্গ করা এবং যুদ্ধবিরতির পরে হত্যাকান্ড চালানোও ইসলামে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন " আর তোমরা যুদ্ধ করো আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। "(সূরা আল বাকারা-১৯০)
হিন্দু ধর্মে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ গীতাশাস্ত্রে ‘যুদ্ধ’ শব্দটির উপর জোর দিয়েছেন।পাশাপাশি এই শব্দটির যথার্থ অর্থও তিনি তুলে ধরেছেন। সেখানে যুদ্ধ সম্পর্কে বলা হয়েছে-দৈবী ও আসুরী গুণসমূহের সংঘর্ষই যুদ্ধ। দৈবী ও আসুরী মানুষের অন্তরের দুটি প্রবৃত্তিকে বলে এবং এই দুটি শান্ত হওয়াই পরিণাম। আর যুদ্ধস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে "মানবদেহ এবং অন্তর সহ ইন্দ্রিয়সমূহই যুদ্ধস্থল।"
গীতায় উল্লেখ আছে, এই দেহটাই ক্ষেত্র, এর মধ্যে ভাল-মন্দ কর্মরুপের যে বীজ বপন করা হয়, তা সংস্কাররূপে অঙ্কুরিত হতে থাকে। যুদ্ধ কামান, ঢাল-তরবারি, তীক-ধনুক, গদা, লাঙল-কোদাল ও কাস্তে-হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে যে সাংসারিক যুদ্ধ করা হয়, তা নয়, এই সাংসারিক যুদ্ধে শাশ্বত বিজয়লাভ হয় না। এটা শুধু সৎ এবং অসৎ.প্রবৃত্তি সমূহের সংঘর্ষ।
শ্রীকৃষ্ণ’র মতে, “আত্মাই সনাতন ও এই শরীর বিনাশলীল, সেইজন্য যুদ্ধ কর। আর যে শরীরের জন্য পরিশ্রম করে, সে পাপিষ্ঠ মূঢ় ব্যক্তি বৃথাই জীবন ধারণ করে।”
দুর্ভাগ্যবশত এখনকার কিছু উগ্রপন্থী মানুষ মনে করে যে তাদের ধ্বংসাত্মকমূলক কার্যকলাপ স্ব স্ব ধর্ম বর্নের গৌরবান্বিত শাসনকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
হত্যা প্রসঙ্গে মদীনা সনদে আছে, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তি কোন অবিশ্বাসী ব্যক্তির নিমিত্তে আরেকজন বিশ্বাসীকে হত্যা করতে পারবে না। (এমনকি অবিশ্বাসী তার নিকটাত্মীয় হলেও)
সনদে আরো আছে, কোন অপরিচিত ব্যক্তি যিনি কারও কোন ক্ষতি বা কোন অপরাধ করেননি তাকে কেউ সাহায্য করলে তিনি অতিথিসেবক (যিনি সুরক্ষা করবেন) হিসেবে পরিচিত হবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকলে উক্ত সুরক্ষা দানকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। অথচ মৌলবাদী সংগঠনগুলো অনায়াসে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়মের বিভিন্ন জায়গায় নরহত্যা নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। বাইবেলের ৬ নং অনুজ্ঞা বা আদেশ অনুযায়ী, নরহত্যা করবে না। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৩)। তোমরা শুনেছো,প্রাচীনকালের মানুষদের কাছে বলা হয়েছিল, তুমি নরহত্যা করবে না, আর যে নরহত্যা করে, সে বিচারাধীন হবে। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ নিজের ভাইয়ের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, সে বিচারাধীন হবে; আর যে কেউ নিজের ভাইকে নির্বোধ বলে, সে বিচার সভার অধীন হবে; আর যে কেউ তাকে পাষন্ড বলে, সে নরকের আগুনের অধীন হবে (মথি ৫:২১-২২)। ব্যভিচার না করেও যদি তুমি নরহত্যা কর তবে বিধান লঙ্ঘনের অপরাধে অপরাধী (যাকোব ২:১১)।
বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মসাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছতে হলে চারটি কর্মকে অবশ্য পরিহার করতে বলা হয়েছে। কারণ এই চারটি কর্ম ধর্ম সাধনার জন্য মহা অন্তরায় স্বরূপ। এগুলো মানব চরিত্রের স্খলন ঘটায়। যার মধ্যে একটি হলো নরহত্যা।
কাজেই প্রতিটি ধর্মের মানুষকে হিংসাত্মক মানসিকতা পরিহার করে শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে, সমাজ জীবনে সংঘাত এড়িয়ে সহ অবস্থানের চেষ্টা করতে হবে । কারন জঙ্গীবাদের কোন ধর্ম, বর্ন গোত্র নাই। তাদের কারনে ধর্মের নামে হত্যা কিংবা খুনের বদলা খুন মানব ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে দিন দিন।