পিরিয়ড

  • মা আমি ৭ দিন স্কুল যাবো না
    হাসিনা আকতার নিগার

    রীতার এক নতুন যন্ত্রনা শুরু হয়েছে মেয়েকে নিয়ে। প্রতি মাসেই সেতু বিশেষ দিনগুলোতে স্কুলে যেতে চায় না। এত করে বুঝাচ্ছে রীতা মেয়েকে কিন্তু সে বুঝতে চায় না এটা শরীরের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উল্টো বায়না ধরছে সে গার্লস স্কুলে চলে যাবে। বললেই কি স্কুল শিফট করা যায়।

    সেতু এবার ক্লাস সেভেনে। স্বাভাবিক ভাবে বয়োসন্ধির এ সময়ে শুরু হয়েছে পিরিয়ড। শারিরীক পরির্বতনে একটা মেয়ে পিরিয়ড নিয়ে বেশ বিব্রত বোধ করে। তবে রীতা তার মেয়েকে সব কিছু বুঝিয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এখন সমস্যা হলো পিরিয়ড কালীন সময়ে স্কুলের টয়লেট ব্যবহার নিয়ে।

    সকাল ৮ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সেতুর স্কুল। এ লম্বা সময়টাতে প্রয়োজন হয় স্যানিটারি প্যাড চেঞ্জ করার। কিন্তু স্কুলে নারীবান্ধব টয়লেটে নাই। তার উপর প্রায় ১২০০ ছাত্র ছাত্রীর জন্য মাত্র ৬টা টয়লেট। তার উপর টয়লেটে থাকে নোংরা। সেতু সাধারণত স্কুলে থাকাকালীন সময়ে টয়লেটে যায় না। আর টয়লেটে যাবার ভয়ে পানি কম খান সকালবেলাতে। এ নিয়েও রীতা মেয়েকে বারবার বলছে ইউরিন চেপে রাখা শরীরের জন্য ক্ষতি। পিরিয়ডের সময়টাতে বলতে গেলে সারা সময় সেতু নাকি জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। তার ভয় যদি ছেলে বন্ধুরা কিছু বুঝে ফেলে।

    সেতুর কথা শুনে চিন্তাতে পড়ে গেল বিষয়টা নিয়ে। সত্যি তো এ সময়টাতে মেয়েদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা থাকা দরকার। অন্য অভিভাবকদের সাথে কথা বলে ঠিক করে স্কুলে টিচারের সাথে বিষয়টা শেয়ার করার।

    গনমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানে স্বাস্থ্য সচেতনতার শিক্ষার কথা বলা হয়। অথচ বেশিরভাগ শিক্ষাংগনে সেতুর স্কুলের অবস্থা।

    প্যারেন্টস মিটিংয়ে যখন রীতা মেয়েদের পিরিয়ড কালীন বিষয় নিয়ে বলা শুরু করে তখন কিছু মা বলে, ' ভাবী এমন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ কি দরকার'। তার প্রতি উত্তরে রীতা বলে, ' পিরিয়ড কোন লজ্জার বিষয় নয়। এটা সম্পর্কে ছেলে মেয়ে সবার পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। তবে এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। স্কুলে অন্তত ৩টা টয়লেট নারী বান্ধব করা হোক। সে সাথে স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা দরকার। বিশেষ প্রয়োজনে যেন ছাত্রীরা কিনতে পারে। আর টয়লেটে পরিস্কার রাখতে সচেতন হতে হবে ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক সহ সকলকে।

    রীতার প্রস্তাবনাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলো খুব শীঘ্রই নারী বান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা সহ সব ব্যবস্থা করবে। সেতু মা কে জড়িয়ে ধরে বলে, ' ইউ আর দ্যা বেষ্ট।'