social media and family life

  • সোশ্যাল মিডিয়ার দোষ কি সব?
    হাসিনা আকতার নিগার

    সুমনা গত ৩ দিন ধরে নিজের সাথে মিজে লড়াই করছে। চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে চলেনি কখনো সে। কিন্তু আজ বুঝতে পারছে না কোন পথে হাঁটবে। পারিবারিক সম্বন্ধে সুমনের সাথে সুমনার বিয়ে হয়েছে ১২ বছর আগে। বয়সের ব্যবধান একটু বেশী হলেও সুমনার প্রতি সুমনের ভালোবাসা কেয়ারিংয়ের কোন কমতি ছিল না। এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার দেখে সবাই বলে নামের মতই ভালোবাসার যুগলবন্দীর উদাহরণ দুজন।

    সুমন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সুমনা ছেলে সংসারের মাঝেও নিজের আগ্রহে ইন্টারনেট জগতের অনেক কিছু রপ্ত করেছে।আর সোশ্যাল মিডিয়াতে সুমনকে এড করে দিয়েছিল সে নিজে। সুমনা বলতো সোশ্যাল মিডিয়াতে পুরোনো বন্ধুদের যেমন পাবে তেমনি যোগাযোগের জন্য ইমু ভাইবার সহ আরো অনেক সুবিধা আছে ।

    প্রথম প্রথম সুমন তেমন আগ্রহ পেত না এ বিষয়ে। বরং বিরক্ত হতো। এমন কি অনেক কিছু পোস্ট করত না বুঝে।সুমনা বার বার সাবধান করত। অনেক সময় নিজে চেক করত তার সাইটগুলো। সুমনের প্রতি কোন অবিশ্বাস সুমনার ছিল না বলে চরম এক ঝড় উঠছে এখন।

    হঠাৎ করে সুমনের মাঝে পরির্বতন। বিশেষ করে রাতের বেলাতে সুমনের ফোনে চ্যাটিং রীতিমতো নেশাতে পরিনত হয়।এ নিয়ে ঝগড়া প্রায়ই হতো সুমনার সাথে। এমনকি ছেলে ফোন ধরলে ক্ষেপে যেতো।

    এসব কারনে সুমনার সন্দেহ হতে শুরু করে। সে কদিন ধরে সুমনকে কিছু না বলে নিজের মত খোঁজ করে জানতে পারে সুমন ইমুতে একটা সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু সে কে বা কেমন সম্পর্ক তা বুঝতে হলে সুমনের ফোনটা খুব দরকার।

    নিজের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে লুকিয়ে সুমনের ইমু দেখে সুমনা স্তদ্ধ। তাদের ১২ বছরের সংসার যেন ১২ সেকেন্ড তছনছ হয়ে গেল। চোখের সামনে সুমন আর ইতি নামের মেয়েটির ছবি ম্যাসেজ বলে দিয়েছে এ কেবল আর না দেখা বন্ধুর সম্পর্কতে নেই।

    সুমন পারেনি সুমনার কাছে কিছু অস্বীকার করতে। সুমনার কাছে ভুলের ক্ষমা চাইলে ও সে পারছে সুমনকে আর বিশ্বাস করতে। সমস্ত সোশ্যাল সাইটকে সুমন বন্ধ করে দিয়েছে।

    নিজের যন্ত্রণাকে বয়ে নিয়ে সুমনা ভাবছে কি করবে এখন। সোশ্যাল সাইটের দোষ কি আসলে এ ঘটনার জন্য? সে তো ব্যবহার করছে অনেক দিন ধরে। তার ব্যক্তিজীবনে তো এমন কিছু সে আসতে দেয়নি। সুমন একজন বিবেকবান মানুষ। তার ভালো মন্দ বিচার করার বোধ আছে। এতদিন অনেকের কাছে শুনেছে সোশ্যাল সাইটের কারনে পরিবার ভাংগছে।আজ সে ভাংগনের মুখে তার ঘর।

    প্রযুক্তি মানুষকে কাছে আনতে গিয়ে নিজের সত্ত্বাকে বিকিয়ে দিতে বলেনি। সুমন বিকৃত আনন্দের মোহতে নিজেকে ডুবিয়েছে। সুমনা তার অন্ধ দৃষ্টিকে উন্মোচন করেছে বলে সে অনুতপ্ত হচ্ছে। এবার না হয় সুমনকে ক্ষমা করে দিলো কিন্তু বিশ্বাস ফিরে আনার দায়িত্ব সুমনের। যদি সত্যি সে ভুল বুঝতে পারে তাহলে প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার দরকার নেই।

    অন্ধ হলে যেমন প্রলয় বন্ধ হয় না তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করলেও মন্দ কাজ হবে নিজের মানসিকতা ঠিক না করলে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়া সমাজ নষ্ট করছে এটা খোঁড়া যুক্তি মানুষের।