-
Posted by
Hasina Akhtar Nigar April 19, 2019 -
Filed in
Society
-
##যৌতুক
-
2,062 views
যৌতুক থেকে মুক্তি নেই
হাসিনা আকতার নিগার
বেশ কদিন ধরে অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিউজ দেখে মন খারাপ হয়। নারীদের উপর শারিরীক নির্যাতনের খবর দিন দিন বাড়ছে। নারীর এগিয়ে যাও জীবনে এটা কিসের লক্ষন প্রশ্ন জাগে বারবার। কষ্ট দেয় ভাবনাগুলো।
এর মাঝেই এক আত্মীয়ের মেয়ের বিয়ের আয়োজন দেখে মনে হলো যৌতুক দেয়া নেয়ার কায়দাটা শুধু বদলেছে। যৌতুক ছাড়া বিয়ে হয় না। ধনীদের কাছে যা উপহার গরীবের কাছে সেটা বোঝা।
আমাদের চট্রগ্রামের গরীব ঘরের মেয়ের বিয়ে মানে বাবা মায়ের জন্য পাহাড়সম দায়িত্ব। অদ্ভুত কিছু রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয় এখানে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কইয়ের তেলে কই ভাজার মত পাত্রপক্ষ মেয়ের টাকাতে বিয়ে করে।
আমার এ আত্মীয় গরীব। অনেক চেষ্টার পর এক সবজি ব্যবসায়ীর সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। এর আগের সম্বন্ধগুলো ভালো হলেও যৌতুকের পরিমান বেশি বলে আগায়নি আর।
এদের চাওয়া হলো মেয়ের থাকার ঘরের ৩ টা ফার্নিচার খাট আলমারি আর ড্রেসিংটেবিলে সহ আনুষঙ্গিক জিনিষ দিতে হবে। সে সাথে ২ লাখ টাকা। টাকার দরকার কারন ছেলে ঘর ঠিক করে বোনের বিয়ে দিবে আর নিজের বিয়ের কেনাকাটা করবে। এখানে আর একটা রীতি হলো বিয়েতে পাত্রের বোন জামাইদের আংটি দিতে হয় মেয়ে পক্ষকে। সে কারনে ছেলের ৩ বোন জামাইকে ৩টা আংটি দিতে হবে।
এরপর আপ্যায়ন এর হিসাবে খুবই সামান্য চাওয়া। আঞ্চলিক ভাষায় বর পক্ষকে বলা হয় " বৈরাতি"। তারা ৩০০ জন বৈরাতি আসার জায়গাতে ১৫০ আসবে। কিন্তু বৈরাতি যেহেতু কম আসবে সে বাবদ চল্লিশ হাজার টাকা দিতে হবে।কারণ এ মানুষগুলোকে ছেলে পক্ষ তার মত করে আপ্যায়ন করবে। তবে আসলে আপ্যায়ন করবে কিনা সন্দেহ হয়।
সব কিছুতে রাজি হয়ে মেয়ের পরিবার বিয়ের আয়োজন করতে এখন নিজের আত্মীয় স্বজন আর পরিচিতজনদের কাছে সাহায্য চাইতে ধার করতে ব্যস্ত। কারণ নিজের যেটুকু অর্থ আছে তা দিয়ে হবে না।
কন্যা দায়গ্রস্ত পিতাকে শুধু বললাম এক মেয়ের বিয়েতে এ অবস্থা আরেক জনের বেলাতে কি করবেন। কোন উত্তর নেই। কেবল দীর্ঘশ্বাস।
যৌতুকের বিরুদ্ধে এত আন্দোলন এত আইন। কিন্তু কিছুই পরিবর্তন হয়নি। মজার বিষয় হলো সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা বলে দিয়েছে তারা টাকা লেনদেনে থাকবে না। এমন কি বিয়ের কোন কাগজ পত্রে যৌতুকের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। কারণ যদি কোন ঝামেলা হয়ে আইনিভাবে তাহলে তারা হয়রানিতে পড়বে। সুতরাং ছেলের বাবা আর মেয়ের বাবা এ লেনদেন করবে।
বাবার অসহায়ত্বের চোখের জল নিয়ে একটা মেয়ে যে সংসার শুরু করে তার কাছে বিয়েটা আনন্দের হয় না। নানা যুক্তি বাহনা দিয়ে মেয়ের বাবার টাকাতে ছেলে বিয়ে করছে এ সত্যটা স্বীকার করতে আবার তার আত্মসম্মানে বাধে।
সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেনীর বিলাসিতা মধ্য - নিম্নবিত্ত শ্রেনীকে প্রভাবিত করছে তা বোঝা যায় এ ধরনের ঘটনাতে।
প্রকৃতপক্ষে সমাজ থেকে যৌতুক প্রথাকে নির্মূল করতে হলে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আইন দিয়ে সাজা হয় যেমন তেমন আইনকে ফাঁকি দেবার প্রক্রিয়াও মানুষ বের করে নেয়।
হয়তো বা এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে সমাজে প্রতিনিয়ত। কটার খবর আমরা জানি। কন্যার দায়ভার যে বড় কঠিন দায়িত্ব । আর জেনেই বা কি হচ্ছে, বলতে তো পারিনি, " যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিবেন না।"