Bilur Games


  • বিলুর গেমস আসক্তি - দায় কার?
    হাসিনা আকতার নিগার

    রবি আর তুলির ব্যস্ত জীবনে বিলুর জন্য সময় খুব কম। বিলুর স্কুল আর মোবাইল নিয়ে কাটে সময়। তুলি অফিস ফিরে ঘরের কাজ আর ছেলে বিলুর স্কুলের পড়া শেষ করে নিজের জন্য তেমন সময় পায় না। আর যেটুকু পায় তখন ব্যস্ত হয় ভার্চুয়াল বন্ধুদের আড্ডাতে। আর বিলুর বাবা রবি ঘরে ফিরে ও ব্যস্ত থাকে নিজের অফিসের কাজে বা বন্ধুদের সাথে নেটে। ছেলের জন্য সময় তারও নেই। ৩ জনের পরিবারে বিলুর ট্যাব হলো তার নীরব বন্ধু ।

    তুলি অনেকটা শখের বসে ছোট বিলুকে ট্যাব কিনে দিয়েছে। ভেবেছে দুষ্টামি করার চেয়ে ট্যাবের গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ভালো থাকবে। কিন্তু এ গেমস যে বিলুকে স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিবে তা কে জানত।
    সেদিন তুলি অবাক হয়ে যায় বিলুর নেটের নানা কর্মকান্ড দেখে। তুলি একটা ফাইল ডাউনলোড করতে পারছেনা কিন্তু কিভাবে জানি বিলু কয়েক মিনিটে করে দিলো। যে ছেলে ইন্টারনেটর এত কিছু জানে তাহলে কেন স্কুল থেকে আজ কমপ্লেইন এলো তাই ভাবছে রবি তুলি।

    টিচার বলছে বিলু লিখতে চায় না। সারা সময় তার গল্প গেমস নিয়ে। আর তুলি ও কদিন ধরে দেখছে বিলু কোন রকম পড়া শেষ করে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ট্যাব নিয়ে। এর মাঝে কদিন ট্যাব নিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে তুলি। বিলু ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক খেলনা ভেংগেছে। বিলুর আচরনের এসব পরিবর্তন দেখে রবি তার এক ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করে বলে সব। মনোজগতের সে ডাক্তার বিলুকে চেম্বারে নিয়ে যেতে বলেছে।

    টেনশনে তুলির ঘুম নেই। বিলু আর আগের মত মায়ের কাছে বায়না করে না। এমনকি বাবা মায়ের ঘরে ফিরা নিয়ে অভিযোগও করে না। বেড়াতে যাবার বায়নাও নেই।

    অফিস না গিয়ে রবি তুলি আজ ডাক্তারের কাছে গেলো বিলুকে নিয়ে। যাবার সময় বিলু তার ট্যাব সাথে নিলো। মায়ের মানা শুনেনি। ডাক্তার অনেকটা সময় বিলুর সাথে তার গেমস আর বন্ধুদের নিয়ে গল্প করলো রবি তুলিকে বাইরে রেখে। সব শুনে মন খারাপ হলো।

    বিলুকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রবি তুলিকে ডাক্তার বললো সব কিছু। আর বললো ডিভাইস নিয়ে তার মাত্রারিক্ত আগ্রহের কারনে স্কুলের পড়া লেখার সমস্যা। বিলুকে গেমস আসক্তি থেকে সরিয়ে আনতে চিকিৎসার চেয়ে মা বাবার সহযোগিতা খুব দরকার। ঘরে ডিভাইসের ব্যবহার কমিয়ে সময় দিতে হবে ছেলেকে। সবচেয়ে ভালো হয় বিলুকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসতে। এ আসক্তি একদিনে বন্ধ করা যাবে না। সময় দিতে হবে।

    ডাক্তারের নির্দেশ মত বিলুকে নিয়ে ইন্ডিয়া ঘুরতে যায় রবি তুলি। দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে তারা। বেড়ানোর ৭ দিনে বাবা মাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বিলু। রবি তুলি গল্পচ্ছলে বুঝায় গেমসের নেশায় সে স্কুলে ভালো রেজাল্ট করবে না। খেলাধুলা না করলে শরীর ঠিক থাকবে না। আর সে সাথে প্রমিজ করে অফিস শেষে ৩ জনে এখনকার মত মজা করবে গল্প করবে।

    ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসে সব ডাক্তারকে জানালে উনি আশাবাদী হয় আর বলে বিলুর আগামী দিনের জন্য বাবা মাকে এ সেক্রিফাইজ করতে হবে। কড়া শাসন নয় বরং বুলিকে উপলদ্ধি করাতে হবে ডিভাইস ব্যবহার সে করবে সময়ের সাথে সাথে তার প্রয়োজন মত।

    প্রায় ১ বছর লাগে রবি তুলির ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। ট্যাব মোবাইল হল এখনকার জীবনে প্রয়োজনীয় বিষয় এটা কোন খেলনা নয়। এ বোধ আসার পর বিলু আর সাথে রাখে না তার প্রিয় ট্যাবকে।

    আধুনিক সমাজে রবি তুলির মত মা বাবারা নিজেদের অজান্তেই সন্তানদের যন্ত্রের বন্ধু করে তুলে। সন্তান মানুষ করার জন্য অর্থের সাথে সাথে মমতা মাখানো সময় দিতে হবে। ইন্টারনেটর বিশালতার কাছে নিজের সন্তানকে হারিয়ে দেয়া যাবে না এ সচেতনতা থাকাটা সবার জন্য জরুরি।