-
Posted by
Hasina Akhtar Nigar December 5, 2018 -
Filed in
Society
-
#বাংলাদেশ
-
1,997 views
তরুন প্রজন্ম্মের চোোখে বঙ্গবন্ধু
হাসিনা আকতার নিগার
লেখক - কলামিস্ট
ইতিহাস লুকিয়ে রাখা যায় কিংবা বিকৃত করা যায়। কিন্তু চিরন্তন সত্য হলো ইতিহাস কোন না কোনভাবেই প্রকাশিত হয় তার আপন নিয়মে। এ সত্যতার প্রমান দিচ্ছে বাংলাদেশের তরুন প্রজন্ম তাদের মনের অজান্তে লুকিয়ে থাকা দেশপ্রেমের তাগিদে- ২১ ফ্রেব্রুয়ারিতে, ৭ মার্চে,১৬ ডিসেম্বর। দেশকে ভালোবেসে এদিনগুলোতে তারা লাল সবুজের পতাকাকে নানা আঙ্গিকে সাথে নিয়ে উৎসবে মুখরিত হয় স্বাধীনতার গৌরবে গৌরাম্বিত হয়ে।
বাংলাদেশের যুগ যুগান্তরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – একজন মহান ব্যক্তিত্ব তা অনস্বীকার্য ও সন্দেহাতীতভাবে। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এ বিষয়টিকে আগামী প্রজন্ম কি ভাবে দেখছে তা বর্তমান সমাজের অনেকের কাছে একটি প্রম্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তরের বাস্তবতা অনেক সময় সমাজ কিংবা রাষ্ট্র আহতকরে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কিছু বিষয়ের কারনে। তবে তরুন প্রজন্মের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে তারা তাদের জাতির পিতার মহানুভবতার কথা জানে এবং মান প্রাণে বিশ্বাস করে বাঙালী জাতীয়তাবাদের নামের সাথেঅঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দেশ প্রেম। যে দেশ প্রেম নেই কোন ছলচাতুরী আছে শুধু নিখাদ ভালোবাসা। কিন্তু এ প্রজন্মের জানার মাঝেও আশঙ্কাজনকভাবে যে বিষয়টি সত্যি তা হলো হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের জ্ঞান খুব সীমিত।
এক্ষেত্রে আশার আলো তখনই দেখা যায় যখন তাদের চেতনা আর বিশ্বাসে এই মহান ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের ধ্যানধারণা খুবই ইতিবাচক ভাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু নিমর্ম বাস্তবতায় ইতিহাসের মূলে তাদের নিয়ে প্রবেশ করলে বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়। যা বোধ করি একটি জাতির জন্য আগামী দিনের অমনি সংকেত হিসাবে বাজতে থাকে বর্তমানে। কেননা একটি জাতির অস্তিত্ত্ব টিকে তাকে তার অতীত ইতিহাস ,বর্তমান কর্মকান্ড আর আগামী প্রজন্মেও ভাবনার উপর । অথচ এদেশের জনগন এখন উপলদ্ধি করতে পারে দীর্ঘকাল ধরে কীভাবে আমাদের ইতিহাস ও ইতিহাসের সবচেয়ে অবিচ্ছেদ্য অংশ অবহেলিত ও অসম্মানিত হয়ে আসছে নানাভাবে। কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তরুণ সমাজ বিশেষ করে ইংরেজী শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা অভ্যস্থ তাদের মতামত আলোকে যে বিষয়টি উঠে আসে তা অনেকটাই আশাহত। কেননা তাদের অধিকাংশেরই উত্তর, “আমি জানি না” বা “ রাজনৈতিক বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই”। দুর্ভাগ্যজনক হলে এটাই বাস্তব সত্য।
এখন যদি তরুণ প্রজন্মকে তাদের এই ব্যবহারের জন্য “অজ্ঞ ও রুঢ়” বলে অভিযুক্ত করা হয় তবে তা সম্পূর্ণ না হলেও অনেকাংশে বর্তমান সময়ে ভুল হিসেবে বিবেচিত হবে। মহান এই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তাদের অনীহা ও অজ্ঞতার বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে তাদের এককভাবেদোষারোপ করা যাবে না। বস্তুত আমাদের দেশের বিদ্যমান প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতির তিক্ত অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের ফলেই তারা এরকম ধারণা পোষন করেছে।
এখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের এ নেতিবাচক ধারণার কারণগুলোর ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে তাদের বিশ্লেষন অনেকবেশি মাত্রায় পীড়াদায়ক এ জাতির জন্য। তাদের মতে, স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতি সম্পর্কে তাদের বিরূপ মনোভাবের সূত্রপাত ঘটে। যার একটি কারণ হলো অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিকভাবে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বাবা মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা চেষ্টা করে নিজেদের মতামতাকে চাপিয়ে দিয়ে সন্তানকে প্রভাবিত করতে। এতে করে পিতামাতা ইতিহাসকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিমার্জিত করে ব্যাখ্যা করেন। যার ফলে সন্তানরা তাদের পিতামাতার মতো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে ওঠে।
তারপর এই অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করে আমাদের তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও তথ্য প্রচার মাধ্যম। শিক্ষাজীবনের পর্বই হচ্ছে একজন ব্যক্তির মূল্যবোধের সঠিক বিকাশ এবং তার নিজস্ব সংস্কৃতি ওইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবার প্রকৃত সময়। কিন্ত, তরুন প্রজন্মের কাছে এবিষয়ের অভিজ্ঞতা হতবাক করার মতো তারা বলে- আমরা আমাদের পুরো স্কুলজীবনে ইতিহাস সম্পর্কে যে কি রকম জ্ঞান অর্জণ করেছি সে সম্পর্কে আমাদের সকলেই ধারনা আছে। আকবর, হুমায়ন বা বাবরের বাবা সম্পর্কে আমরা সবকিছু জানি কিন্তুআমাদের জাতির পিতা সম্পর্কে কখনও কিছু শিখানো হয় না। এমন কি সরকার পরিবর্তন হবার সাথে সাথে পাঠ্য পুস্তকের বিষয়বস্তর ও পরিবর্তন হয়ে যায়।
এরপর বলা যায় আমাদের কিছু সম্মানিত শিক্ষকের কথা, যাদের পবিত্র দায়িত্ব আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা প্রদান হলেও তারা নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস ও নেতাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে আমাদের ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন। শুনতে বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্য।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তরুণ সমাজ নিজস্ব ধ্যাণ-ধারণার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। তাদের শিক্ষক বা পিতামাতা আর তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে না । একটি সাবলীল উপস্থাপন এবং মনোমুগ্ধকর টিভি অনুষ্ঠান তাদের সহজেই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। এখানেই তথ্য প্রচার মাধ্যমের প্রকৃত সার্থকতা। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় বা পত্রপত্রিকায় আমাদের ভদ্রবেশী দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের অর্থহীন বক্তব্য দেখে বা পড়ে, বাবা-মা ওশিক্ষকদের থেকে শেখা সব তথ্য তরুণদের কাছে এলোমেলো মনে হয়। তরুণ মনকে এগুলো এতই আহত করে যে ,তারা আর এ বিষয়ে এক মুহুর্তও সময় নষ্ট করতে চায় না। আজকের তরুণ সমাজ এতটাই বাস্তববাদী ও মুক্তমনা যে তারা খুব ভালভাবেই জানেরাজনীতিবিদরা যাই বলুক না কেন তারা তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনার উপর নির্ভরকরতে পারে।
তাই, এখনই সময় এ জাতির তরুণ প্রজন্মকে বাংলার প্রকৃত ইতিহাসের সাথে একাত্ম করার সময় এসেছে। সময় এসেছে এই দেশের স্বাধীনতা ও সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে আত্মত্যাগ সে সম্পর্কে অবহিত করার। ইতিহাস পাতা থেকে ইতিহাসকে সরিয়ে দেয়ার অর্থ হলোশুধুমাত্র এই মহান ব্যক্তিত্বের অবমাননা নয় বরং সমগ্র জাতিকে অপমান করা ।
বাংলাদেশের একবিংশ শতাব্দীর তরুন প্রজন্ম আগামী শতকের কান্ডারী হয়ে যে যার অবস্থান থেকে দেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করবে। তাই এই তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাহলে বাংলা মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যে রক্ত মিশে আছে সেখান থেকে জন্ম হবে হাজারো বঙ্গবন্ধুর। যারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের মাধ্যমে জাতিকে উপহার দিবে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং এনে দিবে মানবিক মূল্যবোধের প্রকৃত স্বাধীনতা আর দূর করবে প্রতিহিংসাপরায়নতার হানাহানিকে ।
Comments